
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২১, ০২: ৫৫
বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে। সাগরযাত্রার জন্য দক্ষিণ উপকূলের জেলেরাও প্রস্তুতি নিয়েছেন এক সপ্তাহ ধরে। জাল মেরামত, আলকাতরা দিয়ে ট্রলারকে পানিরোধক করা শেষ করে মাঝিমল্লাদের জন্য বাজার–সওদা করে প্রস্তুতি শেষ করে রেখেছিলেন ট্রলারের মালিকেরা। শুধু বাকি খন্দলে বরফ ভর্তি করা। কিন্তু সেই যাত্রায় বাগড়া দিয়েছে বৈরী আবহাওয়া। বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে বৃহস্পতিবার থেকে উত্তাল সাগর। সমুদ্রবন্দরে জারি করা হয়েছে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত।
দেশের মৎস্য সম্পদের সুরক্ষা ও মাছের বংশবিস্তারে সাগরে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয় ২০ মে থেকে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পার হলেও বেশির ভাগ জেলেই সাগরে যেতে পারেননি।
জেলেরা বলছেন, এমনিতেই করোনাকালে তাঁদের রোজগারে টান পড়েছে। তার ওপর সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় চরম সংকটে পড়েন তাঁরা। পরিবার নিয়ে মানবেতর দিন কাটান। নিষেধাজ্ঞা চলকালে জেলেরা খাদ্যসহায়তা হিসেবে চাল পেয়েছেন। তবে নিষেধাজ্ঞার সময় যে চাল দেওয়া হয়, তাতে এক মাসেরও খোরাক হয় না।
বরগুনার তালতলীর জয়ালভাঙার জেলে আলম মিয়া বলেন, একটা গ্রামে ৫০০ জেলে থাকলে চাল পান ১০০ জন। যাঁরা পান, তাঁদের আবার ওজনে কম দেওয়া হয়। জেলে নন, এমন লোকেরাও চাল পান। জনপ্রতিনিধিসহ অনেকে জেলেদের চালে ভাগ বসান বলে অভিযোগ করেন এই জেলে।
মেরিন ফিশারিজ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে প্রতিবছর ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ। ২০১৫ সালে এই নিষেধাজ্ঞা চালু হয়। শুরুতে শুধু ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলার এর আওতায় থাকলেও ২০১৯ সালে সব ধরনের নৌযানকে এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়।
পটুয়াখালীর মহিপুরের জেলে কালাম শরীফের কথায়, এ নিষেধাজ্ঞাকালে তাঁদের দুর্দশার আভাস পাওয়া গেল। কালাম বললেন, ‘করোনায় মোগো মেরুদণ্ড ভাইঙা দেছে। হ্যার পর ২২ দিনের ইলিশের অবরোধ (নিষেধাজ্ঞা), ৮ মাসের জাটকা ধরার অবরোধ। হ্যারপর গাঙ্গে-সাগরেও তেমন মাছ-পোনা নাই। এইরপর আবার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। মোরা যে ক্যামনে বউ-বাচ্চা লইয়্যা বাঁইচ্চা আছি, কইতে পারি না।’
গতকাল বিকেলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য বন্দর পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, অনেক ট্রলার ঘাটে নোঙর করে আছে। জেলেরা জানান, দুই মাস তাঁরা আর্থিক অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে পার করেছেন। কমবেশি সব জেলেই ধার-দেনা ও ঋণ করে কাটিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ-বাংলাদেশ প্রকল্পের দলনেতা ও মৎস্য বিজ্ঞানী আবদুল ওহাব বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তটি দেশের মৎস্য সম্পদ, জীববৈচিত্র্য ও মানুষের কল্যাণে করা হয়েছে। তবে সেটা ৬৫ দিনের জন্য প্রয়োজন আছে কি না, সেটা বৈজ্ঞানিকভাবে তথ্য-উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। এটা ১ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত করলে অধিকতর কার্যকর হবে বলে মনে করেন এই বিজ্ঞানী।
More Stories
সাগরে লঘুচাপ, বাড়তে পারে বৃষ্টি
উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে তলা ফেটে ট্রলার ডুবে গেছে।
আগামী তিন দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে।