
দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মুখোশধারীদের হামলায় আক্রান্ত হওয়ার পর ভারতজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার। হামলার পরই গত রবিবার মধ্যরাতে মুম্বাইয়ের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভ হয়েছে কলকাতা, পুনেসহ বিভিন্ন শহরেও। বিক্ষোভকারীদের দাবি ভিন্নমত
দমন করতে এ হামলা চালিয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) সমর্থিত অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের কর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে হঠাৎ করে নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢুকে পড়ে অর্ধশত মুখোশধারী। হাতে বড় বড় লাঠি আর পাথর নিয়ে একের পর এক হোস্টেলে তাণ্ডব চালাতে থাকে তারা। মুহূর্তের মধ্যে পুরো ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত ছোটাছুটি করতে থাকে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা।
ওই ঘটনার পরই আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মোমবাতি মিছিল বের করে নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানায়। পুনের ফিল্ম ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট এবং কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেছে।
গতকাল সোমবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জেএনইউর ছাত্র সংসদ নেত্রী ঐশী ঘোষ। তার অভিযোগ, ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলনকে ভাঙতেই এ হামলা চালানো হয়েছে। তবে হিন্দুত্ববাদী গু-াদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
ঐশী আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশ কোনো হস্তক্ষেপই করেনি। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল জেএনইউর উপাচার্য জগদেশ কুমারের। ওরা বলেছিলেন, সব ঠিক আছে। আমরা ওদের সরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু তার পরেই এ ঘটনা ঘটে।’
জেএনইউর হামলা নিয়ে প্রতিবাদমুখর সিপিএম। বিজেপি ও আরএসএসের সমালোচনা করে দলটির সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘খোদ রাজধানীর বুকে দেশের এক নম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে এ ঘটনা। প্রশাসন এবং হামলাকারীদের মধ্যে যোগসাজশ ছাড়া হতেই পারে না। বিজেপি-আরএসএসের যে হিন্দুত্বের কর্মসূচি, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে জেএনইউ প্রথম সারিতে। সেই কারণেই এমন হামলা। ক্যাম্পাসের ভেতরে শিক্ষার্থীরা যদি নিরাপদ না হয়, তাহলে আমরা কেউ কোথাও সুরক্ষিত নই।’
হামলা নিয়ে মুখ খুলেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক। তার মতে, এ হামলার ঘটনায় নাৎসি জামানায় পরিণত হওয়ার আগেকার বছরগুলোর মিল রয়েছে ভারতের। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় বিশ্বের দরবারে দেশের ভাবমূর্তি নিয়ে যে ভারতীয়রা সহানুভূতিসম্পন্ন, তাদের চিন্তিত হওয়া উচিত। জার্মানি যখন নাৎসি জামানায় রূপান্তরিত হচ্ছিল, সেসব বছরগুলোর ছায়াই যেন দেখা যাচ্ছে।’
নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার নিন্দা জানিয়েছে জামিয়া টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনও (জেটিএ)। তাদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় মুখোশধারীদের সহায়তা দিয়েছে প্রশাসন।
নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ফ্যাকাল্টি সদস্যদের অভিযোগ, রবিবার সন্ধ্যায় হামলার সময় পুলিশ ও ক্যাম্পাসের বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীরা নীরব ছিল। ভাঙচুর চালিয়ে সন্ত্রাসীদের বেরিয়ে যেতেও তাদের সহায়তা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে তারা।
মুখোশধারীদের হামলা চালানোর ঘটনার পর এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে দিল্লি পুলিশ দাবি করছে, কয়েকজন মুখোশধারীকে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে। পুলিশের কাছে বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছিল। এখন পর্যন্ত একটি মাত্র এফআইআর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ।
সম্প্রতি ভারতে পাস হওয়া সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়। গত মাসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
More Stories
ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম নিষিদ্ধ করে দিল রাশিয়া
১০ দিন পর ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা রাশিয়ার
পাকিস্তানে মসজিদে বিস্ফোরণ, নিহত ৩০